ছাতক প্রতিনিধি:: বুধবার, ৩০ মার্চ ২০১৬ :: শেষ হয়ে গেছে নির্বাচনী প্রচারণা। রাত পোহালেই ভোট গ্রহণের পালা। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে প্রার্থীরা ভোটের হিসেব নিয়ে ব্যস্ত। উৎসব-মুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ চান তারা। কিন্তু নির্বিঘ্নে ভোট গ্রহণ নিয়ে শঙ্কার শেষ নেই। বিভিন্ন ইউপিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্র গুলো নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন অধিকাংশ ভোটার। ক্ষমতাসীন আ.লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের হুংকারে তৃণমুলের ভোটাররা সহিংসতার আশংকা করছেন। ফলে উৎসব মূখর পরিবেশের পরিবর্তে ভোটারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী কার্যালয় থেকে প্রতিটি ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্র গুলোর স্বচ্ছ ভোট বাক্সসহ অন্যান্য সরমঞ্জাদি দায়িত্বশীলদের হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
চেয়ারম্যান-মেম্বার প্রার্থীরা এখন এজেন্ট নিয়োগ ও ভোট কেন্দ্র সাজানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এছাড়াও ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নানা কৌশলে কাজ করছেন প্রার্থীদের কর্মী বাহিনী। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা ভোট কেন্দ্রে জালিয়াতির আশ্রয় নিলে ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্র গুলোতে হতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা। বিভিন্ন ইউনিয়নের দলীয় প্রার্থীদের সাথে কথা বলে এমনই আভাস পাওয়া গেছে। তবে ভোটারদের নির্ভয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ছাতক উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৬৫জন চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত আসনে ১শ’ ২৩জন ও সাধারন সদস্য পদে ৫১৯জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে রয়েছেন। নির্বাচনে ৯৮টি ভোট কেন্দ্রকে অধিক ঝুঁকিপূর্ন ও ১৬টি ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উপজেলার ১৩ইউনিয়নে মোট ভোট কেন্দ্রের শতকরা প্রায় ৮৩ দশমিক ২১ ভাগ ভোট কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ন হওয়ায় সুষ্ট ও উৎসব মুখর নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টিকে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
সম্প্রতি নির্বাচনী আইন-শৃঙ্খলা কমিটির এক বিশেষ সভায় সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম ঝুঁকিপূর্ন কেন্দ্রের তথ্য নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। পুলিশ প্রশাসনের দেয়া তথ্য অনুযায়ি উপজেলার মোট ১৩৮ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৯৮টি ভোট কেন্দ্রকে অধিক ঝুঁকিপূর্ন ও ১৬টি ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাধারন কেন্দ্র হিসেবে দেখানো হয়েছে মাত্র ২৩টি ভোট কেন্দ্রকে।
কালারুকা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫জন, সংরক্ষিত আসনে ১০জন ও সাধারন সদস্য পদে ৩৯ জন, মোট ভোট কেন্দ্র ১০টি। চরমহল¬া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৮জন, সংরক্ষিত আসনে ৯জন ও সাধারন সদস্য পদে ৪০জন ও ভোট কেন্দ্র ১০টি।
নোয়ারাই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫জন, সংরক্ষিত আসনে ১১জন ও সাধারন সদস্য পদে ৪৬ জন, ভোট কেন্দ্র ১০টি। গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪জন, সংরক্ষিত আসনে ৬জন ও সাধারন সদস্য পদে ৪৪জন, ভোট কেন্দ্র ১১টি।
ছাতক সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩জন, সংরক্ষিত আসনে ৮জন ও সাধারন সদস্য পদে ৩৪জন, ভোট কেন্দ্র ৯টি। ইসলামপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫জন, সংরক্ষিত আসনে ১৩জন ও সাধারন সদস্য পদে ৪৫জন, ভোট কেন্দ্র ১১টি।
উত্তর খুরমা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩জন, সংরক্ষিত আসনে ৮জন ও সাধারন সদস্য পদে ৩৬জন, ভোট কেন্দ্র ১০টি। দক্ষিন খুরমা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪জন, সংরক্ষিত আসনে ১২জন ও সাধারন সদস্য পদে ৪১জন, ভোট কেন্দ্র ১০টি।
সিংচাপইড় ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৮জন, সংরক্ষিত আসনে ১০জন ও সাধারন সদস্য পদে ৪০জন, ভোট কেন্দ্র ১০টি। জাউয়াবাজার ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৮জন, সংরক্ষিত আসনে ৯জন ও সাধারন সদস্য পদে ৪৭জন, ভোট কেন্দ্র ১৪টি।
ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩জন, সংরক্ষিত আসনে ১১ জন ও সাধারন সদস্য পদে ৪৩জন, ভোট কেন্দ্র ৯টি। দোলারবাজার ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪জন, সংরক্ষিত আসনে ৮জন ও সাধারন সদস্য পদে ৩৮জন, ভোট কেন্দ্র ১২টি। ভাতগাঁও ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪জন, সংরক্ষিত আসনে ৮জন ও সাধারন সদস্য পদে ৩৬জন, ভোট কেন্দ্র ১১টি।
এদিকে ইউপি নির্বাচন সুষ্ট ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চারস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর পাশাপাশি ভ্রাম্যমান আদালত ও ষ্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়মিত চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ইউসুফুর রহমান জানান, সুষ্ট নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচনী মালামাল সংশি¬ষ্ট দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে প্রতিটি ভোট কেন্দ্র পৌঁছে দেয়া হয়েছে।